সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বরিশালের আগৈলঝাড়া থানা অফিসার ইন চার্জ (ওসি)র এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মারধর ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগ এনে ওসি গোলাম ছরোয়ারের স্ত্রী ও ছাত্রী আবিরা ছরোয়ার শেফার মা মৌসুমী আক্তার কোতোয়ালী মডেল থানায় এই মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্তরা হচ্ছে : নগরীর বগুরা রোডের বাসিন্দা ফাতেমা খাতুন চম্পা ও তার মেয়ে সাবিকুন নাহার শশি এবং নগরীর মতাসার এলাকার তাওসিফ মাহমুদ স্বাধীন ও আসাদ ইসলাম। এছাড়া অজ্ঞাত আরো ৪ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মারধর ও শ্লীলতাহানীর শিকার ছাত্রী আবিরা সরোয়ার শেফা আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মো. সরোয়ারের মেয়ে।
আগৈলঝাড়া থানা অফিসার ইন চার্জ মো. গোলাম সরোয়ার চাকুরির সুবাদে আগৈলঝাড়া থানা এলাকায় একা বসবাস করেন। লেখা-পড়ার কারণে তাঁর স্ত্রী ছেলে মেয়ের নিয়ে বরিশাল নগরীর কাজীপাড়া লুৎফর রহমান সড়কের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। ওসি গোলাম ছরোয়ারের মেয়ে আবিরা সরোয়ার শেফা নগরীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষার্থী।
মামলার বাদী ছাত্রীর মা মৌসুমী অভিযোগে জানান, কয়েক মাস আগে তার মেয়ে শেফা শশিকে ডাকতে তার বাসায় যায়।এ সময় শশি ও আসাদকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখতে পায় শেফা। বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য শেফাকে অনুরোধ করে তারা। শশি ও আসাদ বিষয়টি ফাঁস হবার আশংকায় ওই দিনের পর থেকে শেফাকে ফাঁদে ফেলতে চক্রান্ত করে। এতে শশির মা ফাতেমা খাতুনও তাদের সহায়তা করেন। চক্রান্ত অনুযায়ী আসাদ তার বন্ধু স্বাধীনকে দিয়ে শেফাকে প্রেমের প্রস্তাব দেবে এবং শেফার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। যা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রকাশ পায়।
চক্রান্ত অনুযায়ী আসাদ তার বন্ধু স্বাধীনকে শেফার সাথে পরিচয় করানোর কিছুদিন পর স্বাধীন শেফাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। শেফা প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় স্কুলে যাওয়া আসার পথে উত্যক্ত করা শুরু করে স্বাধীন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর স্কুল থেকে ফেরার পথে স্বাধীন তার কয়েকজন সহযোগী নিয়ে শেফার পথরোধ করে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। তাতে শেফা রাজি না হওয়ায স্বাধীন টানা হেঁচড়া করে এবং শেফাকে মারধর করে। শেফার চিৎকারে পথচারীরা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। এরপর আবারো তাদের চক্রান্ত সফল করতে শেফাকে স্বাধীন উত্যক্ত করা শুরু করে।
সর্বশেষ গত ৩০ নভেম্বর পরীক্ষা দিতে স্কুলে যায় শেফা। পরীক্ষা শেষে শেফাকে ডেকে স্কুলের সামনে নিয়ে যায় শশি। সেখানে শশির মা ফাতেমা খাতুন, আসাদ ও স্বাধীকে দেখে শেফা চলে যেতে চাইলে পথরোধ করা হয়। এক পর্যায়ে তারা আবারো শেফাকে মারধর করে।
শেফার বাবা ওসি ছরোয়ার বলেন, বিষয়টি স্কুলের এক শিক্ষককে অবহিত করা হয়। কিন্তু এরপর অভিযুক্তরা আরো বেপরোয়া হয়ে শেফাকে উত্যক্ত করতে থাকে। এমনিক স্কুল ও কোচিং সেন্টারে শেফার নামে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন কথা এবং নানা ধরনের কুৎসা রটায়। হয়রানির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায শেফা বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। শেফা কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে সুস্থ করতে মানসিক চিকৎসক দেখানো হয়েছে। এ অবস্থায় বিলম্ব হলেও আমার স্ত্রীকে দিয়ে মামলা দায়ের করাতে বাধ্য হয়েছি বলে জানান ওসি।
সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবা হোসেন বলেন, গত মঙ্গলবার দুপুরে শেফা বাবা ওসি গোলাম ছরোয়ার আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাকে শেফাকে মারধরের কথা উল্লেখ রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি আজিমুল করিম বলেন, আগৈলঝাড়া থানার ওসি গোলাম ছরোয়ারের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে তার মেয়েকে উত্যক্ত ও মারধরে অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।